27/10/24

Script: The Untold Story of President ZIA

কি করে জিয়াউর রহমান একজন সেনা কর্মকর্তা থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হলেন? শেখ মুজিব হত্যায় কি জিয়াউর রহমানের ভূমিকা ছিল? কর্নেল তাহেরের সাথে কি জিয়া বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন ? চলুন দেখে আসি সার্চ অব মি..


১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর।  ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়েছে। ভারতের তৎকালীন সেনা প্রধান জে এন চৌধুরি ঘোষণা দিলেন বিকেলের মধ্যেই লাহোর দখল করবেন। শুধু তাই নয়, লাহোরের জিমখানায় বসে পায়ের উপর পা তুলে চা খাবেন। তুমুল যুদ্ধ বেধে গেলো। ভারতীয় বাহিনীকে রুখে দিতে পাকিস্তানের বাকি ইউনিটগুলো  যখন ব্যর্থ তখন ত্রাতা হয়ে এলো ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট। বেঙ্গল রেজিমেন্টের বীরত্বে রক্ষা পায় লাহোর। পাকিস্তান জুড়ে ছড়িয়ে পরে বাংলার দামাল সেনাদের কথা।  এই ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টেরই কমান্ডার ছিলেন জিয়াউর রহমান। অসামান্য বীরত্বের জন্য পাকিস্তান সরকার তাকে ভূষিত করে হিলাল-ই-জুরাত পদকে। এর ঠিক ছয় বছর পর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সামনে হাজির আরেকটি যুদ্ধ।


২৫ মার্চ, ১৯৭১। জিয়াউর রহমান তখন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৮ম ব্যাটালিয়নের কমান্ডার। ঊর্ধ্বতন সেনা অফিসার লে. জেনারেল জানজুয়াকে বন্দী করে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই বিদ্রোহ করে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন জিয়া। জিয়াউর রহমান, শাফায়াত জামিল ও জিয়াউদ্দিন প্রমুখ সেনা কর্মকর্তারা এই বিদ্রোহের চিন্তা অনেক আগে থেকেই করে আসছিলেন। জিয়াউর রহমান কেবল সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন। ২৫ মার্চ পাকিস্তানিদের সশস্ত্র অপারেশন জিয়ার সামনে বিদ্রোহের বৈধ কারণ এনে দেয়। বিদ্রোহের পরপরই জিয়া চট্টগ্রামের অসামরিক টেলিফোন অপারেটরকে চট্টগ্রামের ডিসি,এসপি, ডিআইজি এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের জানাতে বলেন যে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অষ্টম ব্যাটালিয়ন বিদ্রোহ করেছে। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করবে। এবং ২৭ মার্চ জিয়াউর রহমান কালুরঘাট রেডিও স্টেশনে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। 


এরপর থেকে ধীরে ধীরে লাইম লাইটে আসতে থাকেন গুরুগম্ভীর তারুণ্যোজ্জল  জিয়াউর রহমান। ঘটনার বাকবদল তাকে নিয়ে আসে আরও সম্মুখে। বাংলাদেশ জন্মের ক্ষণকাল পরেই যে উত্তাল আন্দোলন শুরু হয়েছিলো সেই সময়ের মহা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র জিয়াউর রহমান।  


শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের পর প্রেক্ষাপটে চলে আসে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী। খালেদ মোশাররফের ক্ষমতা দখলের ব্যর্থ চেষ্টা, জিয়াউর রহমানের উত্থান, কর্নেল তাহেরের ফাঁসি, জিয়ার মৃত্যু ও জেনারেল এরশাদের ক্ষমতা দখল একের পর এক ঘটতে থাকে। এত অল্প সময়ে নায়ক অথবা খল নায়ক হিসেবে জিয়া যতটা আলোচিত হয়েছেন এত আলোচনার জন্ম আর কেউ দিতে পারেননি। জনমনে তাই এখনও জিয়াকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন। আগ্রহ তুমুল। 


কি করে জিয়াউর রহমান একজন সেনা কর্মকর্তা থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হলেন? শেখ মুজিব হত্যায় কি জিয়াউর রহমানের ভূমিকা ছিল?  কর্নেল তাহেরের সাথে কি জিয়া বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন ?  চলুন দেখে আসি সার্চ অব মিস্ট্রি কি খুঁজে পেলো।    


প্রথম প্রশ্ন, জিয়া কি স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন?


জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন কি না তা নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি কথা প্রচলিত আছে। মতের পার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু এই প্রশ্নের জবাব আমরা একটু ভিন্ন ভাবে দেখার চেষ্টা করব। জিয়াউর রহমান ২৬ মার্চে ,তার ও তার ব্যাটালিয়নের বিদ্রোহের খবর জানিয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন এটাও যেমন সত্য তেমনই ২৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আরেকটি ঘোষণা পাঠ করেছিলেন তিনি। 


২৭ মার্চ মেজর জিয়া কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে একটি ঘোষণায় বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক রূপে আমি মেজর জিয়া শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছি (I Major Zia,Provisonal Commander-in-Chief of the Bangladesh Liberation Army,hereby proclaim,on behalf of Sheik Mujibur Rahman,the Independence of Bangladesh)। তিনি স্বাধীনতার ঘোষক হন বা না হন ২৭ মার্চ তার ঘোষণার প্রভাব বা গুরুত্ব এখানে সবচেয়ে বিবেচ্য বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের জন্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য এই ঘোষণা বা মুজিবের পক্ষে ঘোষণাপত্র পাঠের ভূমিকা কতখানি?  চট্রগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে যখন তার কণ্ঠস্বর 'আমি মেজর জিয়া বলছি..' বললেন, তখন সে কণ্ঠ বাংলার দিশেহারা মানুষকে দিয়েছিলো স্বস্তি ও সাহস। সেদিন বাংলার মানুষ উপলব্ধি করেছিলো, তারা একলা নয় তাদের লড়াই করবার মত একটি সেনাবাহিনী রয়েছে। সেদিনের সেই ভাষণের পর থেকে মেজর জিয়াউর রহমান জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেন

যা পরবর্তীতে জিয়াকে রাজনীতি ও ক্ষমতার কেন্দ্রে নিতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছিলো। 


স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ শেখ মুজিবের শাসন আমলে জিয়ার ভূমিকা কি ছিল? 

স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সেনা অফিসারদের নিয়ে সেনাবাহিনী গঠিত হয়।  ৫ এপ্রিল, ১৯৭২ এ শফিউল্লাহকে চিপ অব স্টাফ করা হয় আর জিয়াউর রহমানকে করা হয় ডেপুটি চিফ অব স্টাফ। অথচ সেনাবাহিনীর ক্রম অনুযায়ী জিয়াউর রহমানের সেনাপ্রধান হওয়ার কথা ছিল। বিষয়টি জিয়াউর রহমানকে ক্ষুব্ধ করলেও তিনি উচ্চবাচ্য করেননি। কিন্তু জিয়াউর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে এটা নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছিলো। জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান হিসেবে দেখতে চাওয়াদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কর্নেল তাহের। জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান না করা নিয়ে সেনাদের মধ্যে অসন্তোষের বিষয়টি শফিউল্লাহ ও খালেদ মোশাররফ ভালোভাবে নেয়নি। আওয়ামী লীগ নেতারাও জিয়াউর রহমানকে উচ্চাকাঙ্খী হিসেবে ধারণা করতো। ফলে ষড়যন্ত্র করে জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনী থেকে সরিয়ে বার্লিণে রাষ্ট্রদূত করে পাঠানোর ব্যবস্থা পাকাপোক্ত হয়ে গিয়েছিলো প্রায়, পরে কর্নেল খুরশীদ উদ্দিনের তদবিরে জিয়াকে সেনাবাহিনীতে পুনরায় ফিরিয়ে আনা হয়। কালের আবর্তনে জিয়া এখন দাঁড়িয়ে ক্ষমতার ইতিহাসের মহা সন্ধিক্ষণে। 


১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে খুন হওয়ার পর খন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেয়। ২০আগস্ট মেশতাক সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেয়। ২৪ আগস্ট জেনারেল সফিউল্লাকে সরিয়ে জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধানের পদে বসানো হয়। এবং ডেপুটি চিফ অপ স্টাফ করা হয় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে।আওয়ামী রাজনৈতিক পরিমন্ডলে শেখ মুজিব হত্যায় জিয়ার হাত আছে বলে একধরনের রাজনৈতিক চর্চা বিদ্যমান আছে। কিন্তু শেষ মুজিব হত্যায় কি জিয়া আসলেই সম্পৃক্ত ছিলো? 


১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টে শেখ মুজিবকে যখন হত্যা করা হয় তখন জিয়াউর রহমান ছিলেন সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ। কিন্তু ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের পর পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে ।২৪ আগস্ট সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ কে সরিয়ে জিয়াউর রহমানকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়। শেখ মুজিব হত্যার সুস্পষ্ট বেনিফিশিয়ারি ছিলেন জিয়াউর রহমান, কারণ শেখ মুজিব নিহত না হলে রাজনীতিতে জিয়াউর রহমানের উত্থান তো হতোই না হয়তো তিনি সেনাপ্রধানও হতে পারতেন না। কিন্তু ১৫ আগস্টের ঘটনায় জিয়াউর রহমানের হাত আছে কি না তা নিয়ে কিছু মুখরোচক গল্প থাকলেও সুস্পষ্ট কোন প্রমাণ এমনকি জিয়ার ঘোর বিরোধীদেরও হাতে নেই। ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডে জিয়ার জড়িত না থাকার প্রমান বহন করে নিম্নোক্ত দুটি ঘটনা,

১. ১৫আগস্ট সকালে রশীদের মুখে মুজিব হত্যার খবর পেয়ে শাফায়াত জামিল প্রথমেই জিয়াউর রহমানের কাছে যান। ঘটনা শোনার পর জিয়াউর রহমান খানিকটা হতচকিত হলেও একদম স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলেছিলেন, ‘So what, president is dead? Vice president is there. Get your troops ready. Uphold the constitution'. 


 ২. আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে, জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেবার পর উপসেনাপ্রধান এরশাদ দিল্লিতে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় কিছু না জানিয়ে দেশে ফিরলে, জিয়াউর রহমান তাকে তিরস্কার করে বলেন যে আপনাদের মত সেনা কর্মকর্তাদের জন্যই জুনিয়র অফিসাররা রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করার দুঃসাহস করে।


এদিকে অভূত্থানকারী জুনিয়র সেনা কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে, খালেদ মোশাররফ ও শাফায়াত জামিল ক্যু করার পরিকল্পনা করে। 

কিন্তু ক্যু হতে পারে এমন আশঙ্কায় ১৫আগস্টের অভ্যূত্থানকারী জুনিয়র অফিসাররা আওয়ামী লীগ বিরোধী দলগুলোর সাথে যোগাযোগ করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে জাসদের কর্নেল তাহের তাদের সাথে জুটে যান। 


৩ নভেম্বর কর্নেল শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান হয়, ক্যাপ্টেন হাফিজুল্লার নেতৃত্বে একদল সৈন্য জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করে ফেলে। 


৪ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ মিছিল নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ এর দিকে রওয়ানা হয়। সে মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন খালেদ মোশাররফের মা ও  ছোটভাই যে কি না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা ছিল। জনমনে ধারণা, ৩ নভেম্বরের ক্যু ভারতের যোগসাজশে আওয়ামী লীগ দ্বারা সংঘটিত। সেদিনই খালেদ মোশাররফ জনসমর্থন হারিয়ে ফেলেন। 


৬ই নভেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকা সেনানিবাসে কিছু লিফলেট বিতরণ করা হয়। ঐ লিফলেট যারা পেয়েছিলেন তারা আঁচ করতে পারছিলেন যে রাতে 'কিছু একটা' ঘটতে যাচ্ছে। সে লিফলেটে সেনাবাহিনীর অফিসারদের হত্যার ইঙ্গিত ছিল পরিষ্কার। লিফলেটে লেখা ছিল , সৈনিক-সৈনিক ভাই-ভাই, অফিসারদের রক্ত চাই।


৭ই নভেম্বর প্রথম প্রহরেই মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করা হলো। বেলা ১১টার দিকে মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফকে তার দুই সহযোগী কর্নেল নাজমুল হুদা এবং লে. কর্নেল এটিএম হায়দারসহ হত্যা করা হয়। ক্ষমতার আরও কাছে চলে এলেন জিয়াউর রহমান। 


কিন্তু এ যাত্রায় কর্নেল তাহেরের সাথে কি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন জিয়া?


সাতই নভেম্বর পালটা অভ্যুত্থানের প্রাণ পুরুষ ছিলেন সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি পাওয়া কর্নেল মো: আবু তাহের। সাথে ছিল বামপন্থী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বা জাসদ। কিন্তু অভ্যুত্থানের পরে রেডিও টেলিভিশনে কোথাও কর্নেল তাহের বা জাসদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। পরিবর্তে জিয়াউর রহমানের মুক্তির বিষয়টা প্রচার হতে থাকে। এতে করে জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে যায়। জিয়াউর রহমান যতই পাদপ্রদীপের আলোয় চলে আসেন, কর্নেল তাহের ততই চলে যান অন্তরালে।


জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার পিছনে কর্নেল তাহের ও জাসদের রাজনীতিক স্বার্থ জড়িত ছিলো। সেসময় সেনাবাহিনী ও জনমনে জিয়াউর রহমানের ভালো রকম জনপ্রিয়তা ছিলো, তাহের ভেবেছিলেন জিয়াকে মুক্ত করা গেলে তাকে তাদের দলে ভেড়াতে পারবেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান মুক্ত হবার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। 


৭ই নভেম্বরের পর দু'সপ্তাহের মধ্যেই জিয়াউর রহমান উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন। এরপর কর্নেল তাহেরের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় ও তাকে ফাঁসি দেয়া হয়। জাসদ কর্তৃক বলা হয়ে থাকে জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। যে কর্নেল তাহের তাকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেছে, তাকেই গোপন সামরিক কারাগারে প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যমে ১৯৭৬ সালের ২১শে জুলাই ফাঁসি দেয়া হয়।


কিন্তু জিয়াউর রহমান কেন কর্নেল তাহেরকে বিচারের আওতায় এনে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন? 

জেনারেল মাহবুবুর রহমান ও মেজর জেনারেল ইব্রাহীমের ভাষ্য থেকে দুটো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রথমত, খালেদ মোশাররফসহ সেনা অফিসারদের হত্যায় যেহেতু কর্নেল তাহেরের হাত রয়েছে। সেহেতু সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কর্নেল তাহেরকে বিচারের আওতায় আনতে চাপ দেয়া হচ্ছিল। দ্বিতীয়ত, জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরের পক্ষ থেকে আরেকটি অভ্যুত্থানের আশঙ্কা করছিলেন ।

যার ফলে জিয়াউর রহমান তার অনুগত সেনা অফিসারদের পরামর্শে কর্নেল তাহেরকে বিচারের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেন। এতে কি জিয়াউর রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়? ক্ষমতার প্রশ্নে ক্ষমতাসীনদের অনেক অপ্রিয় এবং কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। জিয়াউর রহমান সম্ভবত তাই করেছিলেন।


এক সাক্ষাৎকারে অবশ্য মেজর জেনারেল ইব্রাহিমের দাবি, "জিয়াউর রহমান ও কর্নেল তাহের কেউ কারো সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি"।


১৯৭৫-এর ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন এবং ১৯৭৭ সালের এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রপতি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং অর্থনীতি পুনর্গঠনে রাষ্ট্রপতি জিয়ার বিভিন্ন পদক্ষেপ দেশ ও বিদেশে প্রশংসিত হয়। সেগুলো হলো


১৯৭৫ এ বাকশাল গঠনের মাধ্যমে শেখ মুজিব সরকার একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রণয়ন করে বাকি সব দল নিষিদ্ধ করেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণ করে বহুদলীয় ব্যবস্থা চালু করেন। তার সময়েই ৭৫ পরবর্তী আওয়ামি লীগের নেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরানো হয় এবং রাজনীতি করবার সুযোগ দেয়া হয়। আবার তিনিই জামাতে ইসলামের মত ধর্ম ভিত্তিক দলকে রাজনীতি করবার সুযোগ তৈরি করে দেন। জিয়াউর রহমানের উদ্দেশ্য ছিল সকল মত ও পথের মানুষের সমন্বয়ে একটি ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ গঠন করা।


জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দর্শনের মূলে ছিল জাতীয়তাবাদ। জাতীয়তাবাদের নানান ডাইমেনশন রয়েছে। যেমন, রেশিয়াল ন্যাশনালিজম, এথনিক ন্যাশনালিজম, টেরিটোরিয়াল ন্যাশনালিজম প্রভৃতি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার বাঙালি এথনিসিটির বা ভাষা ভিত্তিক যে জাতীয়তাবাদের ধারণা, সে ধারণা থেকে বেরিয়ে জিয়াউর রহমান টেরিটোরিয়্যাল ন্যাশনালিজম বা অঞ্চলগত জাতীয়তাবাদের ধারণা সামনে আনেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদে যেমন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বসবাসরত অন্য জনগোষ্ঠী গুলোকে উপেক্ষা করেছে, জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধারণা সে সমস্যার একটা সমাধান এনে দিয়েছে। অর্থাৎ জাতীয়তাবাদ এথনিসিটি বা ভাষা কেন্দ্রিক না হয়ে যে ভূখণ্ডকে আমরা বাংলাদেশ বলি সে ভূখণ্ড কেন্দ্রিক হবে। 


জিয়াউর রহমান চেয়েছিলেন, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বসবাসরত সকল বর্ণ ও গোত্রের মানুষরা একটা পরিচয় ধারণ করবে আর তা হচ্ছে বাংলাদেশি। যখন সবাই বাংলাদেশি পরিচয়টাকে লালন করা শুরু করবে, তখন এ দেশের কল্যাণে, দেশের বিপদে সবাই একই ছাতার নিতে আসতে পারবে। আর সকল নাগরিকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা বাংলাদেশ কে একটি দেশ হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাবে। 


আজকের দিনে যে ইনক্লুসিভনেসের কথা বলা হচ্ছে জিয়াউর রহমান তা ভেবেছিলেন আশির দশকে। 

জিয়াউর রহমান মনে করতেন বাংলাদেশের রাজনীতির জন্ম এদেশের কাঁদা-মাটি থেকে হতে হবে, ভিনদেশীয় কোন ফর্মুলায় নয়। 

আমার রাজনীতির রূপরেখা নামক বইতে জিয়াউর রহমান লিখেছেন, "যে রাজনীতির অনুপ্রেরণা বাংলাদেশের মাটি থেকে জন্মাবে না সে রাজনীতি বাংলাদেশের মাটিতে টিকে থাকবে না"। 


জিয়াউর রহমান মনে করতেন একটি জাতির জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ ও অগ্রগতি লাভের জন্য দুই ধরনের বিপ্লবের দরকার পরে। 

১. রক্তাক্ত বিপ্লব 

২. শান্তিপূর্ণ বিপ্লব 


জিয়াউর রহমান মনে করতেন আমাদের রক্তাক্ত বিপ্লব ৭১ এ হয়ে গেছে। এখন আমাদের পালা শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের। জাতীয়তাবাদী চেতনা সকলের মনে ছড়িয়ে দেবার মাধ্যমে একটি কর্মঠ, উদ্যমী নাগরিক গোষ্ঠী তৈরির মাধ্যমেই বিপ্লবের দ্বিতীয় ধাপ তথা সাংস্কৃতিক বিপ্লব সাধিত হবে। জিয়াউর রহমানের এ চিন্তার সাথে জার্মান আইনজীবী ও সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবারের চিন্তার সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ম্যাক্স ওয়েবার তার বিখ্যাত গ্রন্থ 'Protestan Ethics and the Spirit of Capitalism' এ ক্যাপিটালিজমের সূচনা হিসেবে Protestant Ethics কে চিহ্নিত করেছেন। যেখানে বলা হতো স্রষ্টার কৃপা প্রাপ্তির চিহ্ন হচ্ছে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ধনবান হয়ে ওঠা।  অন্য দিকে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের চেতনার বীজ জনমনে বপনের মাধ্যমে জনতাকে এটা অনুভব করাতে চেয়েছেন যে এদেশটা তাদের, তাদের নিজস্ব উন্নয়ন আর দেশটার উন্নয়ন একে অন্যের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। এভাবেই একটি উদ্যমী জনতা তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান।


জিয়া বলতেন, বাংলাদেশ অর্থ হচ্ছে গ্রাম। বাংলাদেশের উন্নতির জন্য আমাদের গ্রাম ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন করতে হবে। তিনি মনে করতেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নকে শহর থেকে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত না পৌঁছাতে পারলে জাতীয় মুক্তি অসম্ভব। তাই তিনি সব সময় গ্রামমুখী অর্থনীতির কথা বলতেন। বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা ও বাস্তবতার অনুসন্ধানে তিনি মাইলের পর মাইল গ্রাম্য মেঠোপথ হেঁটে বেড়িয়েছেন। জিয়াউর রহমান কর্তৃক গৃহীত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদক্ষেপের একটি জনশক্তি রপ্তানি ও  তৈরি পোশাক শিল্প স্থাপন ও বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করা। যার সুফল এখনও ভোগ করছে বাংলাদেশ। ১৯৭৮ সালের ৪ জুলাই তাঁরই উদ্যোগে বাংলাদেশি উদ্যোক্তা নুরুল কাদের খান দক্ষিণ কোরিয় শিল্পগ্রুপ দেইউ-এর সঙ্গে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে যৌথ উদ্যোগে একটি শতভাগ রফতানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা ‘দেশ গার্মেন্টস’ প্রতিষ্ঠা করেন। উভয় পক্ষে গৃহীত এক চুক্তির মাধ্যমে ১৩০ জন তরুণ-তরুণী দক্ষিণ কোরিয়ার পুসান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরাই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ভিত ও এর মূল মানবসম্পদের ভিত গড়ে দেন।

জিয়াউর রহমানের যত সমালোচিত দিক:

জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ব্যাপক আলোচিত ও সমালোচিত একজন শাসক। তার সমালোচকরা মোটাদাগে তিনটি বিষয় ধরে সমালোচনা করে থাকেন। 


১. ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া:

১৫ আগস্ট শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হলে রাজনৈতিক পরিমন্ডল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। খন্দকার মোশতাক ও সাবেক বাকশালিরা সরকারে থাকলেও সরকার চলছিলো মুলত অভ্যুত্থানকারী জুনিয়র সেনা অফিসারদের ইশারায়। সেই মেজরগংদের একটা অফিশিয়াল নাম ছিলো 'সেনা পরিষদ'। সেনা পরিষদ আরেকটা অভ্যুত্থানের আশংকা করছিলেন যা তাদের সেনা প্রধান জিয়ার প্রতি আরও নির্ভরশীল করে তোলে। এমনিতেও জিয়াউর রহমানের প্রতি সেনা পরিষদের সেনা অফিসারদের একটা সফ্ট কর্নার ছিলো। যা নিজের প্রয়োজনে কাজে লাগান জেনারেল জিয়াউর রহমান। এবং খুব ঠান্ডা মাথায় ক্ষমতার কেন্দ্রে যাওয়ার ছক কষতে থাকেন। 


১৯৭৫ সালের ১১ নভেম্বর বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, আমি রাজনীতিবিদ নই। আমি একজন সৈনিক।.... রাজনীতির সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই এবং আমাদের সরকার সম্পূর্ণ নির্দলীয় ও অরাজনৈতিক।

এরপর ১৯৭৬ সালের মে মাসে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক জনসভায় জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, আমি একজন শ্রমিক। একজন ‘শ্রমিক’ ও ‘সৈনিক’ কীভাবে একের পর এক সিঁড়ি পেরিয়ে ক্ষমতার শীর্ষে চলে যেতে পারেন, তার একটা চিত্রনাট্য আগেই লিখে রেখেছিলেন পাকিস্তানের সেনাপতি আইয়ুব খান। জেনারেল জিয়া এ চিত্রনাট্য ধরেই এগোতে থাকেন এবং অবশেষে গন্তব্যে পৌঁছে যান।

২. মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের রাজনীতিতে পুনঃর্বাসন ও ইসলামীকরণ :

জিয়াউর রহমানের সবচেয়ে বড় সমালোচনার জায়গা হচ্ছে, বাংলাদেশ বিরোধীদের রাজনীতিতে পুনঃবাসন করা। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণের পর একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বদলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফেরার ইঙ্গিত দেন। এজন্য তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা চালু করেন। এতে করে ৭১ এ যারা স্বাধীনতার সুস্পষ্ট বিরোধী ছিলো তারা এদেশে ফেরার এবং  রাজনীতি করার সুযোগ পেয়ে যান। একই সাথে ইসলামপন্থী দলগুলো পুনঃরায় মাথাচাড়া দেয়। 

রাষ্ট্র প্রধানের পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর জিয়াউর রহমান এক সরকারি ঘোষণা দ্বারা সংবিধানে সংশোধনী এনে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ (পরম দয়ালু, দয়াময় আল্লাহর নামে) সংযোজন করেন। সংবিধানের ৮(১) এবং ৮ (১ক) অনুচ্ছেদে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ কথাটি যোগ করা হয়। ৮(১) অনুচ্ছেদে সমাজতন্ত্রকে ‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার রূপে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সংবিধানের ২৫(২) অনুচ্ছেদে যোগ করা হয়, ‘রাষ্ট্র ইসলামী সংহতির ভিত্তিতে মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক সংহত, সংরক্ষণ এবং জোরদার করিতে সচেষ্ট হইবেন।’

বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে ১৯৭৭-৭৮ সালে বাংলা পত্রিকা দৈনিক বার্তার সম্পাদক কামাল লোহানী বলেছেন, তিনি মনে করেন, জিয়াউর রহমান নিজের রাজনীতি করার স্বার্থ থেকেই বহুদলীয় গণতন্ত্রের কথা বলে স্বাধীনতাবিরোধীদের সুযোগ দিয়েছেন।

অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন,আওয়ামী লীগের বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করে জিয়াউর রহমান নিজের শক্তিকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন বলে তাঁর ধারণা।

সমালোচকদের দাবি জিয়াউর রহমান নিজেকে শক্তিশালী করতেই বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারণা সামনে এনেছিলেন। বস্তুত এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বিরোধিদের নিজের কাছে টেনে দল ভারি করাই ছিলো তার উদ্দেশ্য। 


৩. প্রতিপক্ষকে কঠোর হস্তে দমন:

জিয়াউর রহমানের আরেকটি বড় সমালোচিত দিক হচ্ছে, জিয়া তার সম্ভাব্য প্রদিদ্বন্দীদের খুব চাতুর্যতার সাথে সরিয়ে দিয়েছিলেন। কর্নেল তাহের সহ কতিপয় সেনা হত্যার জন্য জিয়াউর রহমানকে হুকুমদাতা হিসেবে মনে করা হয়। 



জিয়াউর রহমান টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটা স্থিতিশীলতা নিয়ে এসেছিলেন বটে। কিন্তু নানানমুখি ষড়যন্ত্র আর বিভিন্ন  প্রতিশোধ পারায়ণ গোষ্ঠীকে বেশিদিন সামলে রাখতে পারেননি। ফলস্বরূপ তাকে ৩০মে, ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হয়। 

কিন্তু কেন হত্যা করা হয়েছিলো তাকে? এতে কি কোন দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিলো? 

সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপি দুইবার ক্ষমতায় গেলেও জিয়াউর রহমানের হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে কোন ব্যবস্থা নেয়নি! যার ফলে এখনও অমিমাংশিতই থেকে গেছে জিয়াউর রহমানের অন্তর্ধানের রহস্য। 


এরপরও শাসক হিসেবে জিয়াউর রহমানের যথেষ্ট সমালোচনা আছে। একদিকে তিনি স্বাধীনতা-উত্তরকালে বহুদলীয় রাজনীতির সূচনা করেছিলেন, অন্যদিকে আবার তাঁর শাসনামলে সংবিধানে ধর্মকে ব্যবহার করা, স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া, কর্নেল তাহেরসহ সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনার আইনগত ভিত্তি, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিরে আনার কার্যকারণ নিয়ে নানা ধরনের কাটাছেঁড়া হয়। তবে মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের অর্থনীতির বিকাশে তাঁর ভূমিকা ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা এক দুরূহ কাজ। জিয়াউর রহমানকে নিয়ে হুমায়ুন আহমেদের দেয়াল উপন্যাসের একটা উক্তি দিয়ে শেষ করবো। জিয়াউর রহমানের পাঁচ বছরের শাসনে প্রতি মাঘের শেষে বর্ষণ হয়েছিল কিনা তা কেউ হিসাব রাখেনি ,তবে এই পাঁচ বছরে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি । অতি বর্ষণের বন্যা না , খরা না , না জলোচ্ছাস । দেশে কাপড়ের অভাব কিছুটা দূর হলো । দ্রব্যমূল্য লাগামছাড়া হলো না । বাংলাদেশের নদীতে প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়তে লাগলো ।


বাংলাদেশের মানুষ মনে করতে লাগলো অনেক দিন পর তারা এমন এক রাষ্ট্রপ্রধান পেয়েছে যিনি সৎ । নিজের জন্য বা নিজের আত্মীয়স্বজনের জন্য টাকা পয়সা লুটপাটের চিন্তা তার মাথায় নেই । বরং তার মাথায় আছে দেশের জন্য চিন্তা । তিনি খাল কেটে দেশ বদলাতে চান । জিয়া মানুষটা সৎ ছিলেন , এতে কোনো সন্দেহ নেই । লোক দেখানো সৎ না , আসলেই সৎ । তার মৃত্যুর পর দেখা গেল জিয়া পরিবারের সঞ্চয় বলতে কিছুই নেই ।



রেফারেন্স:


১. বিএনপির সময়-অসময় (মহিউদ্দিন আহমেদ)


২. https://www.bbc.com/bengali/articles/cw88vqg9nvxo


৩. https://www.bbc.com/bengali/news-57293187


৪. https://www.bbc.com/bengali/news-41123860


৫. https://www.bbc.com/bengali/news-40682021


৬. https://www.jugantor.com/politics/283413



৭. https://www.prothomalo.com/opinion/column/%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7-%E0%A6%93-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6-%E0%A6%97%E0%A6%A0%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B2%E0%A7%9C%E0%A6%BE%E0%A6%87


৮.

https://m.dailyinqilab.com/article/351141/%E0%A6%B6%E0%A6%B9%E0%A7%80%E0%A6%A6-%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A3%E0%A7%87-%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A7%80%E0%A7%9F-%E0%A6%85%E0%A6%AC%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%A8


৯.

https://dainikdinkal.net/news/%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%A4/9916/%E0%A6%85%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%B6%E0%A6%B9%E0%A7%80%E0%A6%A6-%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%93-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%8F%E0%A6%A8%E0%A6%AA%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%AD%E0%A7%82%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE


১০. https://www.bbc.com/bengali/news/2016/06/160602_bnp_zia_analysis


0
 
0

1 Comments

Md Mohammad

3 months ago
thank you so much bro for give us your script
1 0 Reply

Search of Mystery

3 months ago
You're welcome!
0 0 Reply
Show more